এক
একটা দুঃসংবাদ জেনে চমকে উঠলো তরুণ প্রকৌশলী ফয়সাল। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজ গভীর রাতে ২৩৯ জন আরোহী নিয়ে নিখোঁজ হয়েছে। উড়োজাহাজটি ২২৭ জন যাত্রী ও ১২ জন ক্রু নিয়ে গতকাল শুক্রবার মধ্যরাতের পর মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে চীনের বেইজিংয়ে যাচ্ছিলো। ভিয়েতনামের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে যে বেইজিংয়ের উদ্দেশ্যে উড়ে যাওয়া উড়োজাহাজটি দক্ষিণ ভিয়েতনামে বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে মালয়েশিয়া ওই এলাকায় উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার খবর নাকচ করেছে। বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার সঙ্গে সন্ত্রাসী কোন কর্মকান্ডের যোগাযোগ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
উড়োজাহাজটি কি কোথাও বিধ্বস্ত হয়েছে? আরোহীরা সবাই কি মারা গেছে? উড়োজাহাজটি কি ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছে? এতগুলো মানুষের ভাগ্যে কি ঘটলো?
পরদিন রবিবার দৈনিক পত্রিকায় উড়োজাহাজ নিখোঁজের খবরের উপরে কান্নারত এক নারীর ছবি ছাপানো হয়েছে। কাঁদতে কাঁদতে তিনি হাঁটু ভেঙ্গে পড়ে যাচ্ছিলেন, তাই একজন তাকে ধরে রেখেছেন এবং তিনিও যে কেঁদে ফেলেছেন তাও বোঝা যাচ্ছে। নিখোঁজ উড়োজাহাজে ছিলেন এই নারীর স্বজন। খবর পেয়ে গতকাল তিনি ছুটে আসেন চীনের বেইজিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এ সময় ফোনে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।
স্বজনকে কি আর কোনদিনও ফিরে পাবেন না তিনি? চোখ দু’টি বন্ধ করে উপরের দিকে মুখ তুলে ক্রন্দনরত মেয়ের ছবিটির দিকে তাকিয়ে গভীর দুঃখ অনুভব করলো ফয়সাল। চোখ ছল ছল করে উঠলো। চোখের পানি মুছলো সে।
ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর মিলে উড়োজাহাজের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে। কিন্তু নিখোঁজের এতটা সময় পরও উড়োজাহাজটির কোন খোঁজ মেলে নি। বিমানে থাকা যাত্রী ও ক্রুদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা জানা যায় নি। উড়োজাহাজে ১৪টি দেশের নাগরিক ছিলেন।
খবর দেখার জন্য টেলিভিশন চালু করলো ফয়সাল।
ফয়সাল, তার আপা ও আপার একমাত্র ছেলে সজীব জিগাতলায় গাবতলা মসজিদের কাছে মনেশ্বর রোডের এই ভাড়া করা বাসায় থাকে। সজীব ঢাকা কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে পড়ে। সে ক্লাস নাইনে পড়া অবস্থায় তার বাবা ঘুমের মধ্যে আকস্মিকভাবে মারা গেছেন। ওনার ডান হাত বুকের উপর চাপা দেওয়া ছিলো। সে রাতে সজীব তার মা সহ দরকারী কাজের জন্য তার নানার বাড়িতে ছিলো।
উড়োজাহাজটির সন্ধান এখনও পাওয়া যায় নি।
একটি সপ্তাহ কেটে গেল, তারপর মাস। কিন্তু উড়োজাহাজটির কোন সন্ধান মিললো না।
কয়েক মাস পর দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক কর্মব্যস্ততার চাপে সকলের মন থেকে এতগুলো প্রাণসহ উড়োজাহাজ নিখোঁজের কথা প্রায় মুছে গেলেও ফয়সালের অনুসন্ধানী, কৌতুহলী ও অত্যধিক অনুভূতিপ্রবণ মনে ঘটনাটির কথা আরও বেশী করে নাড়া দিতে লাগলো। মূল্যবান মানুষগুলিকে নিয়ে ওত বড় একটা উড়োজাহাজ এভাবে উধাও হয়ে যাবে? তার কোন চিহ্নই খুঁজে পাওয়া যাবে না?
তাহলে কি এই সৌরজগতের এই পৃথিবী ছাড়া অন্য কোন গ্রহের বা অন্য কোন নক্ষত্র জগতের জীবরা উড়োজাহাজটিকে তাদের গ্রহে নিয়ে গেছে? হ্যাঁ, এটাই সত্যিকারভাবে ঘটেছে। ফয়সালের এই চিন্তার পশ্চাতে যৌক্তিকতাও আছে।
দুই
১৯০৮ সনের ৩০শে জুন ভোর ৭টা ১৭ মিনিটের সময় মধ্য উত্তর সাইবেরিয়ার টুঙ্গাসকা নদীর তীরবর্তী কোন এক স্থানে একটি নিয়ন্ত্রিত মহাশূন্যযান অন্ততঃ আড়াই হাজারটিরও বেশী (২৫০৮টি) হিরোশিমা বোমার সমান শক্তি নিয়ে ভূপৃষ্ঠ থেকে অন্যুন দুই মাইল (মতান্তরে পাঁচ মাইল) উপরে বিস্ফোরিত হয়েছিল এবং উত্তাপে অন্ততঃ ত্রিশ মাইল বর্গ অর্থাৎ ৯০০ বর্গমাইল এলাকা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ধবংসস্তুপে পরিণত করেছিল, যার ক্ষমতা ছিল তিন কোটি টন টি. এন. টি. (ট্রাই-নাইট্রো-টলুয়িন) বিস্ফোরক (একটি হিরোশিমা বোমার বিস্ফোরণ ক্ষমতা ছিল তের হাজার টন টি. এন. টি. বিস্ফোরকের সমান)। টুঙ্গাসকা বিস্ফোরণের ঘটক নভোযানটি অবশ্যই ছিল পৃথিবীর বাইরে থেকে আগত; কারণ ১৯০৮ খৃষ্টীয় সনে পৃথিবীর মানুষেরা ওরূপ কোন মহাশূন্যযান তো দূরের কথা পারমানবিক বোমাই আবিষ্কার করতে সক্ষম হয় নি। সুতরাং তা ছিল সৌরজগতের বাইরে থেকে আগত একটি মহাশূন্যযান।
পারমানবিক জ্বালানী-চালিত মহাকাশ-যানটির ওজন ছিল অন্ততঃ কয়েক হাজার টন এবং যাত্রা শুরুর সময়ে তার গতিবেগ প্রায় আলোর গতিবেগের সমানই ছিল এবং তা ছিল তার চালকের নিয়ন্ত্রণাধীনেই। কিন্তু তৎসত্ত্বেও যানটির নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় অবশ্যই এমন ত্রুটি ছিল, যে কারণে সৌরজগতে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে চালক তার গতিবেগ কমিয়ে আনলেও যথোপযুক্ত পরিমাণে তা কমাতে পারেন নি। ফলে হঠাৎ করেই যানটির বহিঃপৃষ্ঠের ও উহার জ্বালানী ট্যাংকের তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং জ্বালানী প্রবাহের নিয়ন্ত্রণকারী ভাল্ব (Valve) গুলি গলতে শুরু করে। অতঃপর ভূপৃষ্ঠের ৮০ মাইল উপরে বায়ুমণ্ডলের ঘন স্তরের সঙ্গে ঘর্ষণে এর তাপমাত্রা যখন ৫০০০ ডিগ্রী ফারেনহাইট হয় তখন অত্যধিক উত্তাপে আয়নিত পরমাণুগুলো একটি ঝলসানো আগুনের জন্ম দেয় এবং আচমকা নভোযানটি একটি বিরাটকায় অগ্নিগোলকে পরিণত হয়। ভূপৃষ্ঠের দুই মাইল (মতান্তরে পাঁচ মাইল) উপরে থাকতেও চালক যানটিকে রক্ষার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে যানটির পারমানবিক জ্বালানীর মধ্যে যে চেইন বিক্রিয়া (Chain Reaction) শুরু হয়ে গিয়েছিল তাতে ভূপৃষ্ঠের ওই দুই মাইল (মতান্তরে পাঁচ মাইল) উপরেই যানটি এক প্রচন্ড বিস্ফোরণের মাধ্যমে চালকসহ সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্নে ‘‘বাষ্পীভূত হয়ে গেল নিজের কিছুমাত্র চিহ্ন না রেখে।’’ এই বিস্ফোরণে যে আগুনের সৃষ্টি হয়েছিল তার তাপমাত্রা হয়েছিল একটি নক্ষত্রের অভ্যন্তরের তাপমাত্রা (১০০০০০০০০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস)-এর চাইতেও বেশী।
নভোযানটি পৃথিবীতে পৌঁছার জন্যই যাত্রা শুরু করেছিল এবং সেই দুর্গম অঞ্চলই তার অবতরণের লক্ষ্যস্থল ছিল কিন্তু চালক যে যানটিকে অর্থাৎ তার গতিবেগকে পূর্ণরূপে এবং যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে নি এবং এই প্রচন্ড গতিবেগই যে যানটিতে আগুন ধরে যাওয়ার এবং পরিণামে তার বিস্ফোরিত হওয়ার কারণ হয়েছিল এ কথাও মিথ্যে নয়। কারণ সে যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে তখনও তার গতিবেগ ছিল ওই সময়ে একটা উল্কার গতিবেগ যা থাকে তার সমান অর্থাৎ ঘণ্টায় ৩০০০০ থেকে ৫০০০০ মাইল বা সেকেন্ডে ১৪ মাইলের মত, যে গতিবেগে একটা উল্কায় আগুণ ধরে যায় এবং স্বাভাবিক আকারের হলে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছার আগেই তা পুড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়; তাছাড়া উল্কায় তো আর পারস্পরিক প্রক্রিয়া (Chain reaction) শুরু হয়ে যাওয়ার মত কোন পারমাণবিক জ্বালানীও থাকে না অথচ টুঙ্গাসকায় বিস্ফোরিত নভোযানটিতে পৃথিবীতে আসা এবং পৃথিবী থেকে ফিরে তার রওয়ানা হওয়ার স্থানে যাওয়ার মত প্রচুর পারমানবিক জ্বালানী ছিল। ভূপৃষ্ঠের আশি মাইল উপরে নভোযানটি যখন ঘন বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে তখন বায়ুকণার সঙ্গে ঘর্ষণে এর তাপমাত্রা হয়েছিল ৫০০০ ডিগ্রী ফারেনহাইট। এই প্রচন্ড তাপে যানটিতে আগুণ ধরে যায় এবং ভূপৃষ্ঠের দুই মাইল (মতান্তরে পাঁচ মাইল) উপর পর্যন্ত আসতে আসতে (অবশ্য চালক যানটির গতিবেগ অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারলেও তখনও তার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় অন্ততঃ দু-হাজার মাইল!) যানটির আয়ণিত (Ionised) পারমাণবিক জ্বালানীর চেইন বিক্রিয়া শুরু হয়ে যায় এবং কয়েক হাজার টন ওজনের সমগ্র নভোযানটিই ৩০ মিলিয়ন অর্থাৎ ৩ কোটি টন টি. এন. টি. বিস্ফোরণের শক্তিবিশিষ্ট একটি বিরাট পারমানবিক বোমায় (২৫০৮টি হিরোশিমা বোমা) পরিণত হ্য় এবং সেকেন্ডের এক ক্ষুদ্র ভগ্নাংশের মধ্যে দুনিয়া কাঁপানো এক প্রচন্ড শব্দে বিস্ফোরিত হ্য়। ভূপৃষ্ঠের দুই মাইল (মতান্তরে পাঁচ মাইল) উপরে বিস্ফোরিত হয়েও নভোযানটি যে ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েছিল এবং সমগ্র উত্তর গোলার্ধে এমন কি জাভার মত দক্ষিণ গোলার্ধভূক্ত কোন কোন স্থানেও ঝড়, ভূমিকম্প, ভূ-আন্দোলন, চুম্বক ঝড় প্রভৃতির আকারে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল তা থেকে অনুমিত হ্য় যে ‘প্রায় আলোর সমান’-ঠিক আলোর সমান নয়, গতিবেগকে সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে আনা অত্যন্ত দূরূহ কাজ এবং যানটি, তার আদি গতিবেগেও যদি বা না হ্য়, অন্ততঃ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময়ও তার যে সেকেন্ডে ১৪ মাইল গতিবেগ ছিল, সে গতিবেগেও যদি ভূপৃষ্ঠে আঘাত করতো তাহলেও পৃথিবীর কক্ষচ্যুতির মত ঘটনা না ঘটলেও পৃথিবীর সমগ্র উত্তর অর্ধাংশকে সে পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারতো এবং তার ফলে যে কী ঘটতো তা দেখার এবং তা বর্ণনা করে বলার মত কেউ কি এখানে থাকতো?
টুঙ্গাসকা বিস্ফোরণের ঘটক যে নভোযানটি তা তার প্রেরক বিজ্ঞানীদেরকেও অবশ্যই এ শিক্ষাটি দিয়ে থাকবে যে যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার অর্জন ব্যতীত এরূপ নভোযান পৃথবীর মত ঘন বায়ুমণ্ডলের আবরণবিশিষ্ট কোন গ্রহ বা অন্য কোন মহাকাশীয় জগতে পাঠানো চরম বিপজ্জনক। যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা অর্জন ব্যতিরেকে আলোর সমান বা তার প্রায় কাছাকাছি গতিবেগে মহাশূন্য ভ্রমণ প্রচেষ্টা বিপর্যয় সৃষ্টিকর-শুধু দূর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে নয়, ভর বৃদ্ধিজনিত পশ্চাদমুখী ধাক্কাকে সামাল দিতে না পারার কারণেও।
প্রথম প্রচেষ্টার ব্যর্থতা তাদেরকে আরও উদ্যমী করেছিল। এখন তারা সেই ক্ষমতা অর্জন করেছে এবং সাফল্যের সঙ্গে নভোযান নিয়ে পৃথিবীতে আসছে।
আর যেহেতু সেই ১৯০৮ সনেই ওইরূপ নিয়ন্ত্রিত মহাশূন্যযান এসেছিল, সুতরাং যারা ওটা পৃথিবীতে পাঠিয়েছিল তারা ওই সময়েই অবশ্যই বিজ্ঞানে পৃথিবীর মানুষের চেয়ে অনেক বেশী উন্নত ও অগ্রগামী ছিল; এখন তারা আরও বেশী উন্নত হয়েছে এবং সত্যিই যে তা হয়েছে তা বিশ্বাস করার মত কারণ আছে। এই ধরণের আরও একটি জিনিস হচ্ছে Flying Saucer বা ‘উড়ন্ত চাকী’। এদের কৌশল ক্ষমতা এতই নিপূণ যে মনে হয় এরা ‘‘সকল জড়তা (গতি ও স্থিতি জড়তা) ও মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব বলয়ের ঊর্ধ্বে’’ এবং এদের গতিবেগ কখনও কখনও ‘‘শব্দের চেয়ে তিনগুণ বেশী’’। এইসব UFO (Un-Identified Flying Object) বা ‘ফ্লাইং সসার’ অবশ্যই বহির্বিশ্ব থেকে আগত এবং তারা সেই অন্য জগতের বিজ্ঞানীদের পাঠানো মহাশূন্যযান ছাড়া আর কিছু নয়; যে সব বিজ্ঞানীরা তাই অবশ্যই পৃথিবীর মানুষদের চাইতেও উন্নততর ও বুদ্ধিমান।
তিন
‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’-এ যে সব নৌকা, জাহাজ, উড়োজাহাজ প্রভৃতি তাদের লোকজনসহ নিশ্চিহ্নে গায়েব হয়ে যাচ্ছে তার কারণ অন্য কোন গ্রহের উন্নততর বিজ্ঞানী-যারা সময় মাত্রা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবহিত-তারাই সময়ের সেই চতুর্থ মাত্রার মধ্য দিয়ে সম্পূর্ণ অদৃশ্যভাবে এসে সেই সময় মাত্রার মধ্য দিয়েই এইসব নৌকা, জাহাজ, উড়োজাহাজ প্রভৃতিকে তাদের লোকজনসহ ছোঁ মেরে তুলে নিয়ে যাচ্ছে তাদের নিজেদের গ্রহে। পৃথিবীর মানুষরা যেমন ব্যাঙ, তেলাপোকা ইত্যাদি কাটা-ছেঁড়া করে তেমনই তারাও পৃথিবীর মানুষদেরকে নিয়ে যাচ্ছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য। ‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’ তাদের ‘নমুনা’ সংগ্রহের ক্ষেত্রস্বরূপ। সময় মাত্রা সম্পর্কে আমাদের ব্যবহারিক জ্ঞান না থাকায় এবং সে মাত্রাকে ব্যবহার করতে না জানার কারণে আমরা যেমন ডান পায়ের জুতাকে টাইম ডাইমেনশন-এ নিয়ে গিয়ে অনায়াসে বা সহজে বাম পায়ে লাগাতে পারছি না তেমনই আমরা সেইসব ‘হারিয়ে যাওয়া’দেরও কোন সন্ধানই করতে পারছি না। সময় মাত্রাকে যারা এভাবে ব্যবহার করতে পারছে তারা অবশ্যই গ্রহান্তরের প্রাণী।
১৯৪৩ সনের অক্টোবর মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়া নৌ-ঘাঁটিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। ‘‘ফিলাডেলফিয়া পরীক্ষা’’ নামে পরিচিত এই বিখ্যাত পরীক্ষায় আলবার্ট আইনস্টাইনের Unified Field Theory বা ‘একীভূত ক্ষেত্রতত্ত্বের’ সাহায্যে প্রচন্ড শক্তির বিদ্যুৎ-চুম্বক ক্ষেত্র সৃষ্টির মাধ্যমে মাত্র এক মিনিটের মধ্যে একটি বেনামী ডেস্ট্রয়ারকে উহার সমস্ত ক্রুসহ ‘টেলিপোর্ট’ করে ফিলাডেলফিয়া নৌ-ঘাঁটি থেকে অদৃশ্য করে দিয়ে ভার্জিনিয়ার নরফোক বন্দরে নিয়ে দৃশ্যমান করা হয় এবং কয়েক মিনিট সেখানে দৃশ্যমান রেখে পূণরায় সেখান থেকে অদৃশ্য করে আবার ফিলাডেলফিয়ায় পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়।
এতে অদৃশ্যাবস্থা থেকে জড়দেহে ফেরৎ আসার পর জড়পদার্থগঠিত জাহাজটিতে কোন পরিবর্তন বা প্রতিক্রিয়া না হলেও মানুষগুলোর মধ্যে বিরাট পরিবর্তন ও প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। কেউ অদৃশ্য হয়ে গিয়ে চিরতরে অদৃশ্যই থেকে গেছে-আর কখনও জড়দেহ গ্রহণ করে দৃশ্যমান হয় নি, অনেকেই জড়দেহে ফেরৎ আসার পর মানসিক ভারসাম্যতা হারিয়ে পাগল হয়ে গেছে, কেউ কেউ এমনি এমনি সাময়িকভাবে অদৃশ্য হয়ে যেত, কেউ কেউ আবার এমন ক্ষমতা অর্জন করেছিল যে আলোক রশ্মি যেভাবে কাঁচের মধ্য দিয়ে চলে যেতে পারে তারাও তেমনিভাবে কংক্রিটের দেয়ালের মধ্য দিয়ে অবাধে চলে যেতে পারতো এবং কারো কারো ভাগ্যে আরও সব অদ্ভূত ঘটনা ঘটেছে এবং তাতেই তারা মারাও গেছে। মানুষের ক্ষেত্রে এত সব জটিলতার সৃষ্টি হলেও, এ পরীক্ষায় মোটামুটিভাবে এটা প্রতিপন্ন হয় যে প্রচন্ডশক্তির বিদ্যুৎ-চুম্বক ক্ষেত্র সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষজনসহ কোন জাহাজ বা ওই ধরণের অপর কোন যানবাহনকে অদৃশ্য বা গায়েব করে ফেলা যায়।
অনুসন্ধানের ফলে দেখা গেছে যে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল-এ যখন জাহাজ, উড়োজাহাউ প্রভৃতি অদৃশ্য হয়ে যায় তখন ওই এলাকায় এবং ওই বরাবর ঊর্ধ্ব দিকেও এমন একটা প্রচন্ড শক্তিশালী বিদ্যুৎ-চুম্বক ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয় যার মধ্যে নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ ও গতির সূত্রসমূহ অকেজো হয়ে যায় এবং কম্পাসসহ অন্যান্য বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় যন্ত্রপাতি অস্বাভাবিক সব আচরণ করে, এমন কি গায়েব হয়ে যাওয়ার পূর্বে সূদক্ষ ক্যাপ্টেন, নাবিক ও বৈমানিকদের কথাবার্তা, আচার-আচরণ ও মানসিক অবস্থা পর্যন্তও অস্বাভাবিক হয়ে যায়।
UFO-গুলো বিশেষ এক ধরণের মহাশূন্যযান যা আমাদের সৌরজগতের বাইরের কোন নক্ষত্র জগত থেকে আগত। কারণ নিশ্চিতভাবেই জানা গেছে যে আমাদের এই পৃথিবী ছাড়া এই সৌরজগতের অন্য কোথায়ও মানুষের, এমন কি কোন জীবেরও অস্তিত্ব নাই। UFO-গুলো কমপক্ষে আলোর সমান গতিবেগসম্পন্ন এবং কাজেই তারা কমপক্ষে ফোটন কণিকা দ্বারা চালিত এক ধরণের ফোটন রকেট। তারা আলোর চেয়ে কয়েক গুণ বেশী গতিবেগসম্পন্ন ‘ট্যাকিওন’ কণিকা দ্বারা চালিত ট্যাকিওন রকেটও হতে পারে। তবে তারা যে নিয়ন্ত্রিত তা পৃথিবীর আকাশে তাদের চলাচলের প্রকৃতি দেখেই বোঝা যায়। কারণ পৃথিবীর আকাশে তারা আলোর গতিবেগ অপেক্ষা অনেক কম এবং বিভিন্ন গতিবেগে চলে-কখনও দ্রুত-কখনও বা ধীরে; আবার কখনও বা চলার পথে হঠাৎ করে থেমেও যায় এবং বেশ কিছু সময় স্থির হয়েই আকাশে ভেসে থাকে। অন্য নক্ষত্রজগতের বিজ্ঞানীরা এইসব UFO-যোগে এসে এভাবে একীভূত ক্ষেত্রতত্ত্বের সাহায্যে ওই সময়ে ওই এলাকায় প্রচন্ড শক্তিশালী বিদ্যুৎ-চুম্বক ক্ষেত্র সৃষ্টি করে অদৃশ্য ছোবলে মানুষজনসহ ওইসব জাহাজ, উড়োজাহাজ ইত্যাদিকে তাদের জগতে তুলে নিয়ে যাচ্ছে।
এমন ঘটনাও ঘটেছে যে বহির্জগতের জীবরা পৃথিবীর কোন নির্জন এলাকায় তার টেনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সময় মানুষ তাদের দেখে ফেলায় তারা তাড়াহুড়া করে সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে চলে গেছে।
পৃথিবীর মানুষেরা এখনও আলোর সমান গতিবেগসম্পন্ন ফোটন রকেটই আবিষ্কার করতে পারে নি, এমন কি ট্যাকিওনের সন্ধানও কেবলমাত্র গাণিতিকভাবেই পেয়েছে মাত্র, বাস্তবে ট্যাকিওন এখনও অনাবিষ্কৃতই-তাদের পক্ষে ট্যাকিওন-চালিত রকেটের কথাই আসে না।
শুধু বারমুডা ট্রায়াঙ্গলই নয়, পৃথিবী-পৃষ্ঠে এমন আরও কতকগুলো জায়গা আছে যে সব জায়গায় বারমুডা ট্রায়াঙ্গল-এর মতই অদ্ভূত সব ঘটনা ঘটে। বৈজ্ঞানিকভাবে এদেরকে Window area বা Vortex নামে অভিহিত করা হয় যেখান দিয়ে জাহাজ, উড়োজাহাজ ইত্যাদিকে অন্য গ্রহে তুলে নেওয়া সহজ। Window area বলতে Dimensional Window বা মাত্রিক গবাক্ষ বা ফাঁক এই জন্যে বলা হয় যে এইসব গবাক্ষ বা ফাঁক দিয়ে ত্রিমাত্রিক বিশ্ব থেকে চতুর্মাত্রিক বিশ্বে প্রবেশ করা বা হারিয়ে যাওয়া যায়। তেমনই Vortex বলতে ‘ঘুর্ণি’-অর্থাৎ চেতনার ঘুর্ণিপাক বুঝায়-যেখানে গেলে মানুষের চেতনা বা বুদ্ধি বিপর্যস্ত হয়ে যায়।
এ ছাড়াও সম্প্রতি ইউরাল পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত কোন এক রুশ মহাকাশ গবেষণাগারের বিজ্ঞানীরা এমন একটি রহস্যময় মহাকাশবাণী রেকর্ড করেছেন যাতে বলা হয়েছে, ‘‘অনেক দূর এসেছো, আর নয়; এর পরবর্তী এলাকাটা সম্পূর্ণরূপেই আমার। একমাত্র মৃত্যুর পরই তোমরা সেখানে আসতে পারবে।’’ তাঁরা নিশ্চিত যে বাণীটি অবশ্যই বহির্বিশ্ব থেকেই আগত।
সংখ্যাতত্ত্বের সম্ভাবনা সূত্রের প্রয়োগ দ্বারাও বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে পৃথিবী ছাড়াও মহাকাশের আরও অন্ততঃ এক লক্ষ গ্রহে জীবের অস্তিত্ব আছে। এদের মধ্যে অনেক না হলেও অন্ততঃ একটিতেও কি মানুষ অপেক্ষা উন্নততর জীবের অস্তিত্ব নাই? অবশ্যই আছে।
তাছাড়া মহাবিশ্বের তুলনায় পৃথিবী হলো মরুভূমিতে একটা বালুকণার মত। এত বিশাল মহাবিশ্বে যদি শুধুমাত্র পৃথিবীতেই মানুষ থাকে তবে এত বড় মহাবিশ্বের কি প্রয়োজন ছিল? আর এরূপ মহাবিশ্বই যখন আছে তখন নিশ্চয়ই এই সৌরজগতের বাইরেও মানুষ আছে।
পৃথিবীর মানুষরা বস্তুর তিনটা মাত্রা সম্পর্কে জানে। আর তা হলো দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা। তাদের কাছে বস্তুর অবস্থিতি এই তিনটা মাত্রার মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু বহির্জগতের জীবরা বস্তুর চতুর্থ মাত্রা সম্পর্কেও জানে। আর তা হলো সময় মাত্রা। অর্থাৎ বস্তু সময়েও অবস্থান করে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পিঁপড়ার তিনটা মাত্রা সম্পর্কে ধারণা থাকায় পিঁপড়া সামনে শলাকা দেখলে শলাকাটিকে ডিঙ্গিয়ে ওপারে চলে যায়। কিন্তু যদি উচ্চতা সম্পর্কে তার ধারণা না থাকতো তাহলে সে ওপারে যেতেই পারতো না। সেক্ষেত্রে কোন মানুষ যদি তৃতীয় মাত্রার ভিতর দিয়ে পিঁপড়াটিকে টুপ করে ধরে শলাকাটির ওপারে নামিয়ে দিত তাহলে সেই পিঁপড়াটির আশেপাশে থাকা অন্য পিঁপড়াগুলো অবাক বিস্ময়ে চিন্তা করতো যে তাদের সঙ্গী পিঁপড়াটি গেল কোথায়? তদ্রুপ মানুষের যদি তৃতীয় মাত্রা সম্পর্কে ধারণা না থাকতো তবে পাহাড়ের কাছে গিয়ে পাহাড়ের উপরে উঠতে না পেরে শুধুমাত্র পাহাড়ের চারপাশে সে ঘোরাঘুরি করতো। পৃথিবীর মানুষের চতুর্থ মাত্রা বা চতুর্মাত্রিক বিশ্ব সম্পর্কে ধারণা নেই বলে বহির্জগতের জীবরা ডাইমেনশনাল উইন্ডো দিয়ে মানুষদেরকে যে ধরে নিয়ে যাচ্ছে তা অন্য মানুষরা দেখতেই পারছে না।
এই ডাইমেনশনাল উইন্ডো সম্পর্কে যদি পৃথিবীর মানুষদেরকে সচেতন করে তোলা যায় বা পৃথিবীর কোন কোন স্থানকে ডাইমেনশনাল উইন্ডো হিসাবে ব্যবহার করা হয় তা যদি মানুষ অবগত হতে পারে এবং বস্তুর চতুর্থ মাত্রা সম্পর্কে পৃথিবীর মানুষদের যদি জানা থাকে তাহলে এই ধরণের ছোবল বহির্জগতের জীবরা আর দিতে পারবে না। অর্থাৎ চোরের চুরি করতে আসার পথ যদি সকলের চেনা থাকে যে অমুক পথ দিয়ে চোর আসবে তবে সেই পথ সম্পর্কে সচেতন হয়ে চোরের চুরি করা বন্ধ করা সম্ভব।
মালয়েশিয়ান উড়োজাহাজ নিখোঁজের দুর্ঘটনার ন্যায় নতুন করে স্বজনকে হারিয়ে আর কোন মানুষকে যাতে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত ব্যথার জগদ্দল পাথর বয়ে বেড়াতে না হয় সেজন্যে কিছু করার তাগিদ অনুভব করলো ফয়সাল।
চার
রাঙামাটিতে ভয়ঙ্কর দর্শন এক জন্তু একজন লোককে জঙ্গলের মধ্যে টেনে নিয়ে গেছে। জন্তুটা দেখতে অনেকটা ভালুকের মত। দেশের যে জায়গায় জীব-জন্তু বাস করে তা ঐ এলাকা থেকে অনেক দূরে হওয়ায় ফয়সালের কাছে বিষয়টা খুবই রহস্যজনক মনে হলো। সে রাঙামাটি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। কিন্তু সে তার আপার কাছে চট্টগ্রাম যাওয়ার ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করলো।
আপা বললেন, ‘‘আচ্ছা যা। কিন্তু নিশাতের সাথে দেখা করে যাস।’’
নীলক্ষেত মার্কেটে বই কিনতে গিয়ে নিশাতের সাথে পরিচয় হয়েছিল ফয়সালের। নিশাত ইংরেজীতে অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ে। আর ফয়সাল বুয়েট থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ বি. এসসি. পাস করেছে। তার একটা ভালো চাকরী হওয়ার পর তাদের বিয়ে হবে।
নয়াপল্টনে নিশাতদের ফ্ল্যাটে গিয়ে ফয়সাল বললো, ‘‘নিশাত, আমি চট্টগ্রাম যাচ্ছি বেড়াতে। তাই তোমাকে বলতে এসেছি।’’
নিশাত বললো, ‘‘বেড়াতে যাচ্ছেন নাকি নতুন কোন খেয়াল চেপেছে মাথায়?’’
ফয়সাল মাথা নীচু করে বললো, ‘‘সত্যিই বেড়াতে যাচ্ছি।’’
নিশাতকে মিথ্যা বলে খুব খারাপ লাগলো। কিন্তু এছাড়া কোন উপায় ছিল না ফয়সালের। কারণ সত্যি কথা বললে নিশাত তাকে যেতে দিবে না।
ফয়সাল চট্টগ্রাম গিয়ে ষোলশহর ২ নাম্বার রেল গেট চশমা পাহাড়ের কাছে তার ফুপাতো বোনের বাসায় উঠলো। ফুপাতো বোনের এক ছেলে তিন মেয়ে। ছেলেই সবার বড়। নাম রুমেল। সে ফয়সালের দুই বছরের বড়। চট্টগ্রাম ভার্সিটি থেকে মেরিন সায়েন্স-এ মাস্টার্স পাস করেছে সে।
ফয়সাল কোনদিন রাঙামাটি যায় নি। তাই সেখানে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার জন্য রুমেলকে সে অনুরোধ করলো। প্রথমে কেউ রাজী না হওয়ায় ফয়সাল সবাইকে বোঝালো, জন্তুটি যে এলাকায় দেখা গেছে সেখানে না গেলে তো কোন সমস্যা নেই। অবশেষে দু’জন রাঙামাটির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো।
রাঙামাটির একটা মনোরম এলাকায় পৌঁছে ওরা কিছু ছবি তুললো। লেক-এর কালো পানির ওপারে গাছ-গাছালীতে আবৃত পাহাড় দেখা যাচ্ছে। লেক-এর ঘাটে সরু ও রং করা চাকচিক্যময় ডিঙ্গি রয়েছে। রুমেল ডিঙ্গিতে চড়ে বৈঠা বেয়ে একটা বাঁকের আড়ালে চলে গেল।
ফয়সাল দ্রুত পিছিয়ে এলো। স্কুল, কলেজে পড়াকালীন রুমেল যখন পাবনায় ফয়সালদের গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যেত তখন অনেক আনন্দে সময় কাটাতো ওরা। রুমেল ফিরে এসে ফয়সালকে না পেয়ে কী পরিমাণ উদ্বেগের মধ্যে যে পড়ে যাবে তা আন্দাজ করে ফয়সালের চোখ ছল ছল করে উঠলো। কিন্তু মনটাকে শক্ত করলো সে।
পাঁচ
জঙ্গলের কিনারের কাছাকাছি জায়গায় গাছপালা নড়ে উঠলো। আচমকা এক জন্তু ফয়সালকে ধরে জঙ্গলের মধ্যে টেনে নিয়ে গেল। কালো লোমের ভিতরে জন্তুটির দেহ ধাতব কোন পদার্থের তৈরী রোবট বলে মনে হলো। ফয়সাল চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারানোর ভান করলো। জন্তুটি কয়েক মুহূর্তের জন্য থমকে দাঁড়ালো। কিছু সময় পর ফয়সালকে এক জায়গায় শুইয়ে দিল।
চোখের পাতা সামান্য ফাঁক করলো ফয়সাল। বড় একটা গুহার ভিতরে সে আছে। আরও একজনকে শোয়ানো রয়েছে। অনিন্দ্য সুন্দরী একজন যুবতী মেয়ে ওখানে কি যেন করছে। তার গায়ের রং তামাটে এবং স্বাভাবিকের চেয়ে লম্বা। পরনে লাল রংয়ের শার্ট ও কালো রংয়ের প্যান্ট। চুলগুলি ঘাড়ের নীচ পর্যন্ত লম্বা। মেয়েটিকে হলুদ স্পঞ্জের মত জিনিস সহ আসতে দেখে চোখ বন্ধ করলো ফয়সাল। নাকের কাছে স্পঞ্জটির স্পর্শ লাগতেই তার চোখে ঘুম নেমে এলো।
একসময় ফয়সাল জেগে উঠলো। গোপনে সে দেখলো, জন্তুটি নিশ্চল দাঁড়িয়ে রয়েছে। সবুজ রংয়ের একটা শিশি আপনা আপনিই উপরের দিকে উঠে গেল। শিশির মুখটি খুলে গেল। সেটি কাত হয়ে তার মধ্য থেকে তরল পদার্থ নীচের দিকে পড়লো। এরপর যা ঘটলো তা দেখে ফয়সালের বুক ধড়ফড় করে উঠলো। একজন পুরুষ মানুষ অদৃশ্য থেকে দৃশ্যমান হলো।
পুরুষটি একটা রিমোটের একটা বাটন টিপতেই জন্তুটি সচল হয়ে চলে গেল। সে ‘‘রাসেলী’’ বলে ডাক দিলে মেয়েটি এগিয়ে গেল। ফয়সাল বুঝলো যে তার নাম রাসেলী। রাসেলীকে পুরুষটি জড়িয়ে ধরে অদ্ভুত ভাষায় কিছু বললো। তারপর লাল রংয়ের শিশি থেকে তরল পদার্থ মুখের মধ্যে ঢেলে দিতেই অদৃশ্য হয়ে গেল। গুহার মুখের কাছে একটু শব্দ হওয়ায় ফয়সাল বুঝলো যে পুরুষটি বাইরে চলে গেল।
রাসেলী ছোট একটা সুড়ঙ্গের মধ্যে প্রবেশ করতেই ফয়সাল হলুদ রংয়ের স্পঞ্জ হাতে নিয়ে সুড়ঙ্গের মুখের এক পাশে দাঁড়িয়ে রইলো।
বেশ কিছুক্ষণ পর রাসেলী ফিরে আসার সময় চোখের পলকে স্পঞ্জটি রাসেলীর নাকের কাছে ধরলো। বাইরে একটা আওয়াজ শোনা গেল। ফয়সাল দ্রুত রাসেলীকে ছোট সুড়ঙ্গের মধ্যে রেখে লাল শিশি থেকে তরল পদার্থ মুখে ঢাললো। শরীরের মধ্যে একটা ঝাঁকুনি টের পেল।
কিছুক্ষণ পর পুরুষটি দৃশ্যমান হয়ে রাসেলীকে এবং ফয়সালকে না দেখে অবাক হলো। ছোট সুড়ঙ্গটির মধ্যে সে যেতেই ফয়সাল হলুদ স্পঞ্জ হাতে নিলো। অচেতন রাসেলীকে নিয়ে সে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফয়সাল স্পঞ্জটি তার নাকের কাছে ধরলো।
সবুজ শিশি থেকে তরল পদার্থ পান করে রিমোটটি নিল ফয়সাল। দেখলো যে হলুদ স্পঞ্জের কাছে সবুজ রংয়ের স্পঞ্জও আছে। শুইয়ে রাখা লোকটির নাকের কাছে সবুজ স্পঞ্জ ধরতেই সে জেগে উঠলো। সে রাসেলী এবং পুরুষ লোকটিকে মেরে ফেলার কথা বলতেই ফয়সাল বাধা দিলো। বহির্জগতের বাসিন্দাদেরকে এই শিক্ষা ফয়সাল দিতে চায় যে তারা পৃথিবীর মানুষদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেললেও পৃথিবীর মানুষরা সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও তাদেরকে না মেরে বাঁচিয়ে রেখেছে, অন্ততঃ উদারতার দিক দিয়ে পৃথিবীর মানুষরা তাদের চেয়ে এগিয়ে আছে। এই শিক্ষার কারণে তারা ছোবল মারা বন্ধও করতে পারে।
তাছাড়া ফয়সাল নিশ্চিত হয়েছে যে বহির্জগতের এই জীবরা প্রকৃতিগত দিক দিয়ে পৃথিবীর মানুষদের মতই। নিশ্চয়ই তাদের গ্রহের আবহাওয়া পৃথিবীর অনুরূপ। কাজেই তাদের পৃথিবীতে থাকতে কোন সমস্যা হবে না। তাদের নিকট থেকে উন্নত বৈজ্ঞানিক জ্ঞান সম্পর্কে জানা সম্ভব হলে এই সৌরজগতের বাইরের গ্রহে যাতায়াত পৃথিবীর মানুষদের কাছে নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে উঠবে। এমন কি নিখোঁজ মালয়েশিয়ান উড়োজাহাজের সন্ধানও তাদের নিকট থেকে পাওয়া যেতে পারে।
তন্ন তন্ন করে খুঁজে প্লাস্টিকের কাগজের মত একটা জিনিস পেল ফয়সাল। দেখলো যে সেটা পৃথিবীর মানচিত্র। উত্তরে বারমুডা দ্বীপ, দক্ষিণে পোর্টারিকো এবং তার উত্তর-পশ্চিম দিকে বাহামা দ্বীপপুঞ্জ। এগুলোর মাঝখানে একটা গোল চিহ্ন। জাপানে, চীনে, ভিয়েতনামে ও আরও কিছু জায়গায় এরকম চিহ্ন আছে। সে বুঝতে পারলো যে গোল চিহ্নিত স্থানগুলোই ডাইমেনশনাল উইন্ডো বা উইন্ডো এরিয়া।
ফয়সাল পুরুষটিকে এবং সঙ্গের লোকটি রাসেলীকে কাঁধে তুলে নিল। বাইরে গিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে জানাতে হবে। এখন রাত। জন্তুটির ব্যাপারে উৎকন্ঠায় আছে ফয়সাল। তাই রিমোটটি হাতে নিয়ে শংকিত মনে পা বাড়ালো।
১৮ আগষ্ট - ২০১৩
গল্প/কবিতা:
২৭ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।
প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী